বাংলদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল আইন, ২০১২ এর আওতায় বিএআরসি-কে সর্বোচ্চ সংস্থা এবং ১৩টি কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট-কে বিএআরসির সংবিধানিক ইউনিট হিসাবে গন্য করে জাতীয় কৃষি গবেষণা সিস্টেম (নার্স) পূনর্গঠিত হয়। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, এনজিও এবং বেসরকারী খাত নার্স এর অংঙ্গ না হলেও গবেষণা সহযোগীতার সংগে যুক্ত। বিএআরসি সহ ১৩টি গবেষণা সংস্থার মধ্যে ৬টি স্বায়ত্বশাসিত এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন, বাকী সংস্থাগুলো অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অধীন এবং ৩টি সংস্থা বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনষ্টিটিউট, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনষ্টিটিউট ও বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ড সরকারী সংস্থা।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (ওয়েবসাইট: www.bari.gov.bd)
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত। সর্ববৃহৎ এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ১৬টি বিভাগ এবং ৭ টি গবেষণা কেন্দ্র, ৬ টি আঞ্চলিক কেন্দ্র ও ৩০ টি উপকেন্দ্র। দু’শর বেশি ফসল ও বিভিন্ন শস্যের ৩৭০টি উন্নত জাত এবং ৪২২ ধরনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। গবেষণার আওতায় শস্যের মধ্যে গম, ভূট্টা, চীনা, কাউন, ডালশস্য, তেলফসল, কন্দাল জাতীয় ফসল, ফল, ফুল, সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল অন্যতম। দেশে গম উৎপাদন ঘাটতি কমানোর লক্ষে প্রায়োগিক গবেষণা অব্যহত রয়েছে এবং এযাবৎ বিভিন্ন অঞ্চল ভেদে ২৮টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের প্রধান উৎস ডাল। কিন্তু দেশে ডালের প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। ডালের উৎপাদন বাড়াতে ৭টি মসুর, ৯টি ছোলা, ৬টি মুগ, ২টি খেসারির উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। দেশে চাহিদার তুলনায় মাত্র এক-তৃতীয়াংশ তেল উৎপাদন হয়। ইনস্টিটিউট বহুমুখী তৈলবীজ গবেষণা ও অধিক উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষে ৩৩ টি জাত উদ্ভাবন করেছে। দেশ আলু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এজন্য ইনষ্টিটিউটের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। উচ্চ ফলনশীল আলুর জাত উদ্ভাবন ও উন্নত বীজ উৎপাদনের ফলে হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ৩০-৩৫ টন। বছর জুড়ে বৈচিত্র্যময় সবজির উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষে ৮৪ টি সবজির জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন টমেটোর জাত উদ্ভাবনের ফলে কৃষকরা অধিক লাভবান হচ্ছে। ইনষ্টিটিউট আমের ওপর গবেষণা করে সুস্বাদু হাইব্রিড আমের জাত উদ্ভাবন করেছে। মসলা ঘাটতি কমাতে প্রায়োগিক গবেষণা জোরদার করে আদা, হলুদ, রসুন, পিঁয়াজ ইত্যাদির প্রায় ২০টি জাত উদ্ভাবনের ফলে উৎপাদন অনেক বেড়েছে। ফুল গবেষণার মাধ্যমে রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, অর্কিড, জারবেরা, এ্যান্থোরিয়াম-এর প্রায় ১৫ টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ফুল একটি রফতানীযোগ্য পণ্য হিসাবে প্রচুর সম্ভাবনা বিদ্যমান।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ওয়েবসাইট: www.brri.gov.bd)
দেশের প্রধান খাদ্য ধানের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ, উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন ও টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষে ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ১৯টি গবেষণা বিভাগসহ ৯টি আঞ্চলিক কেন্দ্র রয়েছে। এ যাবৎ বিভিন্ন মৌসুমের উপযোগী ৬ (ছয়)টি হাইব্রিড ধান সহ ৯১টি উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। বর্তমানে ব্যপক জনপ্রিয় ব্রি ধান ১১, ২৮,২৯ জাত দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতে কৃষকরা চাষাবাদ করছেন। উন্নত চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন ও দারিদ্র বিমোচনে অবদান রাখছে। মাটি, পানি, সার ব্যবস্থাপনা, পোকা মাকড় ও রোগবালাই দমন, কৃষি যন্ত্রপাতি ও ধানভিত্তিক খামার বিন্যাস প্রভৃতি বিষয়ের ওপর শতাধিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি উন্নয়নের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের জোয়ারভাটা ও লবণাক্ত সহিষ্ণু, মঙ্গা ও হাওর এলাকার জন্য আগাম জাতসহ অন্যান্য ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। ধান ভিত্তিক শস্যবিন্যাস, রোগব্যাধি, ক্ষতিকর পোকা সনাক্ত ও দমন ব্যবস্থাপনা এবং জীববৈচিত্র রক্ষা করা হচ্ছে। আট হাজারের বেশি ধানের জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে জিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দেশে কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। সে কারণে খাদ্য উৎপাদন কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছনোর কৌশল মোকাবেলায় কৃষকের কাজে সহায়তার লক্ষ্যে ধানের চারা বপন, ধান কাটা ও মাড়াই যন্ত্র কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। ইউরিয়া সার ব্যবস্থাপনায় লিফ কালার চার্ট ব্যবহার প্রযুক্তি কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ইউরিয়া সারের অপচয় রোধ করবার লক্ষ্যে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং যন্ত্রের সাহায্যে গুটি ইউরিয়া জমিতে প্রয়োগ করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে যন্ত্রপাতি ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার ফলে উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব, লোকসংখ্যার বাড়তি চাপ এবং কৃষি জমির পরিমান সংকুচিত হওয়া সত্ত্বেও ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বর্তমানে ধান উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিগত ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ধানের উৎপাদন ছিল ৩৪২ লক্ষ মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (ওয়েবসাইট: www.bjri.gov.bd)
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনষ্টিটিউট, পাট উৎপাদন সম্পর্কিত গবেষণা এবং পাটের বহুমুখী পণ্য উদ্ভাবন ও উন্নয়ন-এর ওপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। ইনষ্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত ৪০টি উচ্চ ফলনশীল জাতের মধ্যে ১৬টি জাত মাঠ পর্যায়ে ব্যাপকভাবে চাষ করা হচ্ছে। এসব জাত ব্যবহার করে পাটের গড় উৎপাদন বেড়েছে এবং কৃষকরাও অধিক লাভবান হচ্ছেন। পাট দেশের অন্যতম অর্থকরি ফসল এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত। বিশ্বজুড়ে পরিবেশ বান্ধব-প্রাকৃতিক আঁশের পণ্যের ব্যবহার বেড়ে যাবার কারণে পাটের ব্যবহার ঊর্দ্ধমুখী। বর্তমানে দেশে সাত লাখ হেক্টর জমিতে প্রায় ১৬ লাখ বেল পাট উৎপাদিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে পাট গবেষণার ক্ষেত্রে দেশের বিজ্ঞানীরা বিশ্বে সর্ব প্রথম জীব প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাটের জীবন রহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে যুগান্তকারি সাফল্য অর্জন করেছেন। পাটসহ পাঁচ শতাধিক উদ্ভিদের বিধ্বংসী রোগ সৃষ্টিকারি ছত্রাকের জীবন রহস্য আবিস্কৃত হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে দেশের বিজ্ঞানীরা পাটের জীবন রহস্য আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন। পাটসহ ছত্রাকের জীবন রহস্যের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের জন্য পাঁচটি পেটেন্টের আবেদন করা হয়েছে। পাটের জীবন রহস্য উন্মোচনের প্রেক্ষিতে জলবায়ু প্রভাব মোকাবেলা সহ বিভিন্ন প্রতিকূলতা যেমন- লবনাক্ততা, খরা, পোকা-মাকড়, রোগ-জীবাণু সহনশীল উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের সুযোগ সৃষ্টি করবে। ইনস্টিটিউটের অন্যতম সফল গবেষণা হল উন্নতমানের পাট আঁশ উৎপাদনের লক্ষে স্বল্প পানিতে পাট পচানোর রিবন রেটিং পদ্ধতির উদ্ভাবন এবং কৃষক পর্যায়ে এ প্রযুক্তি হস্তান্তর করা হয়েছে। ইনস্টিটিউটের জিন ব্যাংকে দেশ বিদেশের ৬০০০ জার্মপ্লাজম সংরক্ষিত রয়েছে। পাটের বহুমুখী কারিগরি গবেষণায় উলে¬খযোগ্য সাফল্য হল - বিভিন্ন পাট বস্ত্র তৈরিতে চিকন সুতার একক ব্যবহারসহ অন্যান্য কৃত্রিম আঁশের সাথে বিভিন্ন প্রকার পাট বস্ত্র উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন। পরিবেশ বান্ধব বিভিন্ন পণ্য উদ্ভাবন ও বাণিজ্যিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিশ্বে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে আর্ন্তজাতিক ও অভ্যন্তরীন বাজারে পাটের মূল্য বৃদ্ধিসহ পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (ওয়েবসাইট: www.bina.gov.bd)
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট ১৯৭২ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস,ময়মনসিংহে স্থানান্তর করা হয়। পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার ও জীব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বংশগতি ধারায় পরিবর্তন করে অধিক ফলনশীল ও মানসম্মত ধান, পাট, তৈলবীজ, ডাল ও সবজি জাতীয় শস্যের জাত উদ্ভাবনে গবেষণা সফলতা অর্জন করেছে। ইনস্টিটিউট কর্তৃক এ যাবৎ ১২টি ফসলের ওপর ৬৩টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। স্বল্প সময়ে বিনাধান-৭ কার্তিকের মঙ্গা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। উচ্চ ফলনশীল বিনা সরিষা-৪ মাঝারি জীবনকালের জন্য একটি অতিরিক্ত ফসল হিসাবে উৎপাদিত হচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল বিনা মসুর-৫ ও ৬, এবং গ্রীস্মকালীন বিনামুগ-৫ ও ৮ ব্যপকভাবে দেশে চাষাবাদ করা হচ্ছে। বিনা চিনাবাদাম ৪ ও ৬ ইত্যাদি ছাড়াও সয়াবিন, টমেটো, পাট ও পাট শাক উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। নাইট্রোজেন সারের বিকল্প হিসাবে ৮ ধরনের জীবাণু সার উদ্ভাবন করা হয়েছে। দক্ষিণে উপকূলীয় অঞ্চলের বিশাল এলাকা জুড়ে ভূমিতে লবণাক্ততা বিদ্যমান। লবণাক্ত সহিষ্ণু বিনা ধান ৮ ও ১০ চাষের সফল প্রযুক্তি উদ্ভাবন উপকূলীয় অঞ্চেলের কৃষকদের মধ্যে ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট (ওয়েবসাইট: www.bsri.gov.bd)
ক্রমবর্ধমান গুড় ও চিনি শিল্পের জন্য ইক্ষু উন্নয়নের লক্ষে ১৯৫১ সালে ইক্ষু গবেষণা ইনষ্টিটিউট পাবনা জেলার ইশ্বরদিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। আখ চাষ দেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে স্বল্প বৃষ্টিপাত এলাকার জন্য উপযোগী এক নির্ভরযোগ্য অর্থকরী ফসল। গুড় বা চিনির ওপর নির্ভর করেই দেশের রসনা তৃপ্তকারি মিষ্টি জাতীয় বিভিন্ন খাবার তৈরি হয়ে থাকে। এ যাবৎ ইনষ্টিটিউট ৪১টি ইক্ষুর জাত উদ্ভাবন করেছে। এসব জাত খরা, জলাবদ্ধতা ও বন্যা প্রবণ এলাকার জন্য বিশেষ উপযোগী। নদী বিধৌত চরাঞ্চলে বর্তমানে নতুন জাতের আখ চাষ করা হচ্ছে। দেশের পাহাড়ি এলাকায় আখের চাষ সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং অর্থকরী ফসলের কারণে আদিবাসিদের মধ্যে আখ চাষে উৎসাহ বেড়ে চলেছে। জাত উদ্ভাবন ছাড়াও ইক্ষুর ফলন বৃদ্ধির চাষাবাদ প্রযুক্তি, সার ব্যবস্থাপনা, পোকামাকড় দমন, রোপা পদ্ধতিতে চাষে সফলতা অর্জন করেছে। আখের পাশাপাশি বিভিন্ন সাথি ফসল চাষের প্রযুক্তি কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। গুড় ও চিনির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আখ চাষের পাশাপাশি সুগার বিট উৎপাদন পরীক্ষা নিরীক্ষায় সফলতা অর্জিত হয়েছে যা আখের বিকল্প হিসাবে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এ প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত ইক্ষুর গড় উৎপাদন চিনিকল ও গুড় উৎপাদন এলাকায় হেক্টর প্রতি ১৫০-২৫০ টন। বর্তমানে চিনির উৎপাদন এক লাখ টন এবং গুড়ের উৎপাদন পাঁচ লাখ টন। ঘাটতি মেটানোর জন্য গোলপাতা, খেজুর ও তাল গাছের চাষ বৃদ্ধির ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (ওয়েবসাইট: www.srdi.gov.bd)
১৯৬১ সালে যাত্রা করে কয়েকবার নাম পরিবর্তনের পর ১৯৮৩ সালে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটউট নামকরণ করা হয় । ইনস্টিটিউট মৃত্তিকা সম্পদের যুক্তিযুক্ত ও লাভজনক ব্যবহার এবং মৃত্তিকা পরিবেশ সুরক্ষায় সরাসরি কৃষক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে মাঠপর্যায়ে সেবা প্রদান করে থাকে। এ উদ্দেশ্যকে সফল করতে- মৃত্তিকা ও ভূমি সম্পদের ইনভেন্টরি তৈরি, সক্ষমতাভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাশ,সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নির্দেশিকা প্রণয়ন, টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সহায়তা করা হয়। ভ্রাম্যমান পরীক্ষাগারের মাধ্যমে রবি ও খরিপ মৌসুমে প্রতি বছর ১১২টি উপজেলায় কৃষকের মাটি পরীক্ষা করে সার সুপারিশ কার্ড বিতরণের মাধ্যমে সেবা দেয়া হয়। বছরে প্রায় ১০,০০০ জন কৃষককে মাটির নমুনা সংগ্রহ কৌশল ও ভেজাল সার সনাক্তকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ঢাকায় কেন্দ্রীয় গবেষণাগার সহ বিভিন্ন জেলার ১৫টি গবেষণাগারে মৃত্তিকা নমুনা ও ১০টি গবেষণাগারে সার বিশে¬ষণের কাজ করা হয়। সকল উপজেলার ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা প্রণয়নের ফলে স্থান ভিত্তিক সঠিক পরিকল্পনাসহ এলাকার ভূমি, মৃত্তিকা, পানি সম্পদের অবস্থা এবং সম্ভাব্য ফসল বিন্যাস ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করা হয়েছে। দক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চলে মাটি পরীক্ষা নিরীক্ষা ও গবেষণা করে বিশেষ পদ্ধতিতে শাক সব্জি চাষের প্রযুক্তি হস্তান্তর করা হয়েছে। বান্দরবনস্থ মৃত্তিকা সংরক্ষণ ও পানি বিভাজিকা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পাহাড়ি ভুমির অবক্ষয় রোধে টেকসই মৃত্তিকা সংরক্ষণ কৌশল এবং চাষাবাদের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কাজ সাফল্যভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। জিআইএস প্রযুক্তির মাধ্যমে উপজেলা ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ নির্দেশিকায় ডিজিটাল তথ্যে রুপান্তর সহ অনলাইন ফার্টিলাইজার রিকমেন্ডেশন সিস্টেম সফটওয়ার চালু করা হয়েছে। এ অনলাইন সার্ভিসের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি-খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সহায়তা, সারের অপচয় রোধ করা, মৃত্তিকা স্বাস্থ্য সংরক্ষণসহ মৃত্তিকা স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, ফসলের মান উন্নয়ন, কৃষি রাসায়নিক মাটি ও পানির দূষণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (ওয়েবসাইট: www.fri.gov.bd)
দেশে নদী নালা খাল বিল হাওর জলাশয় ও প্রচুর পুকুর থাকা সত্ত্বেও বিপুল পরিমানে আমিষের ঘাটতি রয়েছে যা বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উন্নত প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব। মৎস্য সম্পদের গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণের লক্ষে ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। চারটি গবেষণা কেন্দ্র এবং চারটি উপকেন্দ্রের মাধ্যমে মিঠা পানি ও লোনা পানিতে মাছ চাষের ওপর বিভিন্ন সফল প্রযুক্তি হস্তান্তর করে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। রুই, মৃগেল, পাঙ্গাস, ক্যাট ফিশ, তেলাপিয়া ও অন্যান্য প্রজাতি মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদনের হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ মৎস্য চাষিদের যথেষ্ট উৎসাহ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। ইনষ্টিটিউটের সহায়তায় বাণিজ্যিক মৎস্য খামার স্থাপন করে খামারিরা সফলতার সাথে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সফলতা লাভ করেছে। ইলিশ মাছের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে জাটকা ধরা নিষিদ্ধ ও ইলিশের সর্বোচ্চ প্রজননের সময় মাছ ধরা নিষিদ্ধ করার ফলে বিগত বছরগুলোতে ইলিশের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। উন্মুক্ত জলাশয়ে বা পুকুরে ভাসমান খাচায় মাছ চাষের নতুন প্রযুক্তি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রযুক্তি তৃণমূল পর্যায়ে ব্যপক ব্যবহারের ফলে দেশে মাছের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (ওয়েবসাইট: www.blri.gov.bd)
দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, খাদ্য ও পুষ্টি ঘাটতি পূরণ, আয়বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রাণিজ কৃষি উন্নয়ন ইত্যাদির লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনষ্টিটিউট, বিএলআরআই ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই থেকে পোল্ট্রি, প্রাণিসম্পদের উৎপাদন সমস্যা চিহ্নিতকরণ, জাত উন্নয়ন, টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও খামারি পর্যায়ে পরিবীক্ষণের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাণিজ উপকরণ, খামারি ও উদ্যোক্তাদের পরামর্শ-সেবা প্রদান করছে। গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিএলআরআই ৬৩ টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। দেশীয় প্রাণিসম্পদ ও ফডারের জাত উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। দেশের আবহাওয়া উপযোগী প্রথমবারের মত বছরে ২৯০ টি ডিম উৎপাদনে সক্ষম নতুন লেয়ার মুরগি জাত শুভ্রা উদ্ভাবন করে খামারি ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমিষের ঘাটতি পূরণে মুরগির পাশাপাশি হাঁসের জাত উন্নয়ন করা হয়েছে। কোয়েলের জাত উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পোল্ট্রি জীব-নিরাপত্তা মডেল রোগ বালাই দমনে অবদান রাখছে। বিএলআরআই উদ্ভাবিত ৩টি ভ্যাকসিন খামারি পর্যায়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিএলআরআই ২০০৭ সালে এ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সনাক্ত করে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর পিপিআর রোগের রেফারেন্স ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিগত এক দশকে ইনস্টিটিউট তিন ধরনের নেপিয়ারের জাত উন্নয়নসহ তিনটি উচ্চ ফলনশীল ঘাসের কাটিং ও বীজ সারা দেশে খামারিদের মাঝে বিতরণ করেছে। খাদ্য ও প্রাণিপুষ্টি বিষয়ে ১৮ টি প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। গরু মোটাতাজাকরণ একটি জনপ্রিয় প্রযুক্তি। বিএলআরআই-এর জীবপ্রযুক্তি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রাণিস্বাস্থ্য ও পুষ্টি গবেষণাগার বিশ্ব মানের। ফলে ন্যানোটেকনোলজি, তথ্যপ্রযুক্তি ও এতদসংক্রান্ত জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সাথে দেশের জনগণের মানসম্পন্ন পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট (ওয়েবসাইট: www.brfi.gov.bd)
চট্টগ্রামের সবুজ পাহাড় ঘেরা এক মনোরম পরিবেশে অবস্থিত বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনন্সিটিউট, বিএআরসি-র একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীন। দেশের বন ও বনজ সম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সুষ্ঠু ব্যবহারের লক্ষে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে। বন ব্যবস্থাপনা ও বনজ সম্পদ দু’টি উইং-এর অধীনে ১৭ টি গবেষণা বিভাগের মাধ্যমে বনজ সম্পদের বৃদ্ধি, জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ, বাঁশ, বেত, ভেষজ উদ্ভিদ ও অকাষ্ঠল সম্পদের উন্নয়ন, প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ভোক্তা পর্যায়ে ব্যবহার ইত্যাদির লক্ষ্যে কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। সমতলে বন সৃষ্টির পাশাপাশি ম্যাংগ্রোভ ও সমুদ্র উপকূলে বন সৃষ্টির সাফল্য বিদ্যমান। দেশের বনজ উদ্ভিদ নমুনার সংগ্রহশালা বা হারবেরিয়ামে ২১ হাজার উদ্ভিদ নমুনা সংরক্ষিত আছে। ৬০০ দেশীয় ও ১,৯০০ বিদেশি কাঠের নমুনার জাইলেরিয়াম এবং রয়েছে ঔষধী, গুল্ম, বেত ও অন্যান্য প্রজাতি সমৃদ্ধ আরবোরেটাম। রয়েছে ২৮ প্রজাতির বাঁশের দর্শনীয় বাগান এবং জার্মপ্লাজম সংগ্রহ। আরো রয়েছে বিভিন্ন কীট পতঙ্গ ও ছত্রাকের সংগ্রহশালা, দেশের বন্যপ্রাণির সংগ্রহশালা, বনতাত্বিক জাদুঘর, টেকনোলজি পার্ক ইত্যাদি। বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে বাঁশের উন্নত ও আকর্ষণীয় আসবাব এবং একই ভাবে অব্যবহৃত কাঠ দ্বারা মনোরম পণ্য তৈরির সফলতাও বিদ্যমান। প্রতিষ্ঠানের সফলতা অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যমান, যেমন- ভূমি অনুযায়ী বৃক্ষ প্রজাতি নির্ণয়, উন্নতমানের চারা ও বীজ উৎপাদন, নার্সারি, পোকামাকড় ও রোগ বালাই দমন ইত্যাদি। টিসু কালচার এবং কঞ্চি-কলম ব্যবহার করে ব্যপক বাঁশ চাষ কৃষক পর্যায়ে খুব জনপ্রিয় প্রযুক্তি। দেশের অভ্যন্তরে বনায়ন বৃদ্ধি এবং উপকূল অঞ্চলের উপযোগী বনায়ন ত্বরান্বিত করবার লক্ষ্যে বন গবেষণা ইনস্টিটিউট নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (ওয়েবসাইট: www.btri.gov.bd)
গবেষণার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানো, উৎপাদিত চা-এর গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষে ১৯৫৭ সালে শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট যাত্রা শুরু করে। এই ইনস্টিটিউট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন এবং বিএআরসি-র সঙ্গে সম্পৃক্ত। চা একটি অর্থকরি ফসল। দেশে প্রায় ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে ১৬৫ টি চা বাগানে ৬৩ লাখ কেজি চা উৎপন্ন হয় এবং অভ্যন্তরীন চাহিদা মেটানোর পর এক লাখ কেজি বিদেশে রপ্তানী করা হয়। ইনস্টিটিউট এ যাবৎ উচ্চ ফলনশীল ও গুণগত মান সম্পন্ন ১৮টি ক্লোন উদ্ভাবন, বাই- ক্লোনাল ও পলিক্লোনাল বীজ উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সহায়তায় বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - উদ্ভিদ বিজ্ঞানের আওতায় উন্নত ক্লোন জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে অধিক ফলন নিশ্চিত করা। কৃষিতত্ত্ব বিভাগের আওতায় গাছের যথাযত পরিচর্যা করা হয়। মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ বাগানের মাটি, সারের নমুনা বিশ্লে¬ষণ ও মাত্রা নির্ধারণ, মৃত্তিকা সংরক্ষণ করে। প্রাণরসায়ন বিভাগের মাধ্যমে চায়ের জৈব রাসায়নিক বিশে¬ষণ ও গুণগত মান নির্ণয় করে। কীটতত্ত্ব বিভাগ চা উৎপাদনের ক্ষেত্রে অন্তরায় যথা-পোকামাকড়, কৃমিপোকা দমন ইত্যাদির পাশাপাশি চা বাগানের বিভিন্ন রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করে। চা শিল্পে দক্ষ কলা কুশলী গড়ে তোলার লক্ষে কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। উৎপাদিত চায়ের গুণগত মান নিশ্চিত করে বাজার জাত করা হয়। বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট-এর চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাটি আধুনিক মানের এবং উৎপাদিত চা ও প্যাকিং-এর মান উন্নতমানের।
বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ওয়েবসাইট: www.bsrti.gov.bd)
রেশম শিল্পের উন্নয়নের লক্ষে ১৯৬২ সালে বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, রাজশাহিতে প্রতিষ্টিত হয়। জন্মলগ্ন থেকে প্রতিষ্ঠানটি রেশম শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে উচ্চ ফলনশীল তুঁত ও রেশমকীটের জাত উদ্ভাবন, তুঁতচাষ প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা, পলু পালন কলাকৌশল, রোগ প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছে। মানসম্পন্ন রেশমগুটি থেকে সুতা আহরণের ওপর গবেষণার মাধ্যমে যুগপযোগী কলাকৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে নিরলস কাজ করে চলেছে। রেশম শিল্পে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এবং উদ্ভাবিত প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে হস্তান্তরের জন্য ইনষ্টিটিউট থেকে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণ অব্যহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। রেশম শিল্পে তুঁতচাষ ও পুষ্টি সমৃদ্ধ তুঁতপাতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে ৯টি উচ্চ ফলনশীল তুঁতজাত উদ্ভাবনের ফলে হেক্টর প্রতি ১২-১৮ মে. টনের পরিবর্তে ৩০-৪০ মে. টন তুঁতপাতার ফলন বেড়েছে। এ জন্য বিভিন্ন সময়ে তুঁত গাছের পরিচর্যা করাও জরুরি। জার্মপ্লাজম ব্যাংকে ৬৪ ধরনের তুঁত গাছ সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তুঁতচাষের পাশাপাশি সাথি ফসল হিসাবে অন্যান্য ফসল চাষ করে কৃষক অধিক লাভবান হচ্ছে। ২৮টি রেশমকীটের উচ্চ ফলনশীল জাত ও ২টি শংকর জাত উদ্ভাবনের ফলে ১০০ রোগমুক্ত ডিমে ২৫-৩০ কেজির পরিবর্তে ৬০-৭০ কেজি রেশমগুটি উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। রেশম পলুর বিভিন্ন রোগ ও সংক্রামণ থেকে রক্ষার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের ফলে রেশমগুটির ফলন ও মান বৃদ্ধি পেয়েছে। রেশমকীটের ডিম পরিবহনের জন্য বাক্স আবিস্কার করা হয়েছে। উন্নত মানের গুটি উৎপাদনের লক্ষে স্বল্প মূল্যে বিভিন্ন ধরনের চন্দ্রকী পদ্ধতি প্রচলন করা হয়েছে। রেশমগুটি থেকে সুতা আহরণের জন্য রিলিং পদ্ধতির মান উন্নয়ন করা হয়েছে। ফলে বিভিন্ন ধরনের রিলিং মেশিনে সুতা কাটা, স্পিনিং করা ও চরকার উন্নয়ন করা হয়েছে। উলে¬খ্য যে, রেশম শিল্পে মহিলাদের অধিক পরিমানে কর্ম সংস্থানের সুযোগ রয়েছে। রেশম বস্ত্র আভিজাত্যের প্রতীক। দেশে ছেলে ও মেয়েদের কাছে রেশমবস্ত্র এখনও আকর্ষণীয় পরিধেয়। কিন্তু চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাজারে রয়েছে স্বল্পতা ও মানসম্পন্ন রেশম কাপড়ের অভাব। রেশমের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনা বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট-এর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ড (ওয়েবসাইট: www.cdb.gov.bd)
তুলা চাষ সম্প্রসারণের লক্ষে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হয়। দেশের জলবায়ু তুলা চাষের জন্য উপযোগী হওয়া সত্ত্বেও এ খাতের বিকাশ ঘটে নি। দেশের ৩৮০টি সুতাকলের জন্য বার্ষিক ৪০ লাখ বেল আঁশতুলার বিপরীতে বার্ষিক উৎপাদন ১৫০ হাজার বেল। কিন্তু বস্ত্রখাত খুবই সম্ভাবনাময় শিল্প যা জাতীয় আয়ের প্রায় ১৩ শতাংশ। প্রতি বছর বস্ত্র ও তৈরি পোষাক রপ্তানীর মাধ্যমে দেশের ১৩ বিলিয়নের ওপর মার্কিন ডলার আয় হয় যা বৈদেশিক আয়ের ৮০ শতাংশ। বর্তমানে তুলা উন্নয়ন বোর্ড অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করবার লক্ষ্যে গবেষণা- বিশেষ করে উন্নত জাত উদ্ভাবন, সম্প্রসারণের কাজ করছে। বীজ উৎপাদন ও বিতরণ এবং বাজারজাতকরণ সহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। প্রযুক্তি হস্তান্তর, চাষিদের দক্ষতা বৃদ্ধি, পোকা-মাকড় ও রোগবালাই দমন প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তুলা চাষের পাশাপাশি সাথি ফসল হিসাবে বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। তুলা চাষ লাভজনক ও অর্থকরী ফসল। তুলা বীজ থেকে ভোজ্য তেল ও খৈল পাওয়া যায়। এ ছাড়াও গাছের পাতা জৈব সার, বিঘা প্রতি ১০ মন জ্বালানি অথবা কাগজের মন্ড, পার্টিকেল বোর্ড তৈরি করতে শুকনো গাছ ব্যবহার করা যায়।
বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট (ওয়েবসাইট: www.bwmri.gov.bd)
খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে উচ্চ ফলনশীল গম ও ভুট্টার জাত এবং টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্য নিয়ে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিডাব্লিউএমআরআই) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রতিষ্ঠান খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে উচ্চ ফলনশীল গম ও ভুট্টার জাত এবং টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে কাজ করছে। এর প্রধান কার্যালয় দিনাজপুরে অবস্থিত এবং এখানে ১২টি গবেষণা বিভাগ, ৫টি আঞ্চলিক কেন্দ্র, ১টি বীজ উৎপাদন কেন্দ্র ও ১টি বীজ উৎপাদন উপ-কেন্দ্র। এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান গম ও ভুট্টার তাপ, লবণাক্ততা, খরা সহনশীল জাত উদ্ভাবন, প্রজনন বীজ উৎপাদন ও মানসম্পন্ন বীজ বিতরণের পাশাপাশি স্টেকহোল্ডার প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ৩৭টি গমের জাত এবং ২০টি হাইব্রিড ভুট্টার জাত উদ্ভাবন করেছে। গমের গড় ফলন বৃদ্ধি পেয়ে ৩.৭৮ টন/হেক্টর হয়েছে এবং হাইব্রিড ভুট্টা ২-এর মতো জাত দুর্যোগময় পরিস্থিতিতেও ১৪ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। ভুট্টা থেকে তেল উৎপাদন একটি সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি, যা প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকার বাজার তৈরি করতে সক্ষম। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ফিনোটাইপিং, মলিকুলার ফিংগারপ্রিন্টিংসহ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিকূলতা সহিষ্ণু জাতের উদ্ভাবন এবং কৃষি যান্ত্রিকীকরণ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট এ বায়োফরটিফাইড গম ও ভুট্টার জাত উদ্ভাবনের জন্য ইনট্রোডাকশন ও সংকরায়নের মাধ্যমে গবেষণা চলমান রয়েছে। শস্য সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের উন্নত পদ্ধতি আবিষ্কারসহ নানাবিধ গবেষণা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রয়েছে। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বৈশ্বিক দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও চরাঞ্চল, উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকা, বরেন্দ্র খরা অঞ্চল, হাওড় ও পাহাড়ী এলাকায় গম ও ভুট্টার চাষ বৃদ্ধির প্রচেষ্টাও চলমান রয়েছে।